আপনার পরবর্তী বিমান ভ্রমণকে সহজ করতে ১০ কৌশল

Singapore Airlinesবিমান ভ্রমণের কথা ভাবছেন? আধুনিক বিমানবন্দরের বাড়তি ব্যস্ততা থেকে আপনাকে একটু স্বস্তি দিতেই আমারা খুঁজে বের করেছি ১০টি চমৎকার কৌশল। এই কৌশল গুলো আপনার ভ্রমণ ও নিরাপত্তার ঝামেলাকে যতটা সম্ভব সহজ করে দেবে।

১. ডিজিটাল হোন
পৃথিবী প্রতিনিয়ত আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে। এখন সব কিছু ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই করা যায়। এই আধুনিক সময়ের সাথে তাল মেলাতে আপনারও উচিৎ প্রযুক্তির ব্যবহার করা। বিমানের টিকিট অনলাইনে কেটে শুরু করতে পারেন আপনার প্রযুক্তি যাত্রা। আজকাল অনেক এয়ারলাইন্সেরই রয়েছে নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ। এসব অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই টিকিট বুকিং ও ক্যান্সেল করা যায়। এর মাধ্যমে আপনি আপনার ফ্লাইটের সার্বক্ষণিক স্ট্যাটাস সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

২. আগে আগে বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকুন
যেকোনো আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ৩ ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে থাকা উচিৎ। দেশের ভেতর হলে আরেকটু কম সময় নিয়ে বিমানবন্দরে যেতে পারেন। এতে আপনি টিকিট এজেন্টের সাথে কথা বলার, নিজের ব্যাগ চেক করার ও সিকিউরিটি চেকের ঝামেলা শেষ করার জন্য যথেষ্ট সময় পাবেন।

Haltrip Post

৩. ট্রাস্টেড ট্রাভেলার প্রোগ্রাম
টিএসএ প্রি-চেক, গ্লোবাল এন্ট্রি, নেক্সাস, সেন্ট্রি এমন অনেক ট্রাস্টেড ট্রাভেলার প্রোগ্রাম চালু আছে আজকাল। এসব প্রোগ্রামে যোগ দিন। এতে আপনি দ্রুত সিকিউরিটি চেক পার হতে পারবেন। সিকিউরিটি চেকের সময় অন্যান্য যাত্রীদের মত আপনাকে জুতা, বেল্ট, জ্যাকেট এসব খুলতে হবে না। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রীর জন্য যেসব জিনিস সাথে নিয়ে ভ্রমণ নিষিদ্ধ এমন অনেক কিছুও আপনি আপনার ব্যাগে রাখতে পারবেন।

turkish-airlines-business-class

৪. ব্যাগে ট্যাগ লাগানো
বাসা থেকে নিজের ব্যাগের জন্য নিজেই ট্যাগ প্রিন্ট করে এঁটে দিন। এতে কিছুটা সময় সাশ্রয় হবে। আর ব্যাগ যতটা সম্ভব ছোট করুন। খুব প্রয়োজনীয় জিনিস না হলে ব্যাগে ঢুকিয়ে ভারি করবেন না। এতে আপনি খুব দ্রুত সিকিউরিটি চেক পার হতে পারবেন। মনে রাখবেন আপনার হ্যান্ড ব্যাগ যত ভারি হবে আপনার চেকিং তত বেশি সময় লাগবে।

৫. ব্যাগে প্রযুক্তির ব্যবহার
আজকাল মোবাইল বা ল্যাপটপ চার্জার সংযুক্ত ব্যাগ পাওয়া যায়। কিছু ব্যাগ আছে যেগুলোতে ব্যাটারি চালিত মোটর লাগানো থাকে যা নিজে নিজে চলতে পারে। এসব ব্যাগ ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। যেসব ব্যাগের ব্যাটারি বা পাওয়ার ব্যাংক চাইলেই কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই আলাদা করে ফেলা যায় সেসব ব্যাগ অনেক এয়ারলাইন্সে বৈধ। তবে ব্যাটারি সহজে খোলা না গেলে সেই ব্যাগ নিয়ে আপনি বিমানে উঠার ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়তে পারেন। এসব স্মার্ট ব্যাগের ব্যাপারে নীতিমালা আপনি ইন্টারনেটেই জানতে পারবেন।

৬. সাথে রাখার ব্যাগের পরিমাপ
বিমানে আপনার সাথে শুধুমাত্র একটি ব্যাগ রাখতে পারবেন যাকে বলা হয় ক্যারি-অন। এই ব্যাগের ওজন, আকৃতি ও তার ভেতরে কি কি নিতে পারবেন সেটা নির্ভর করে আপনি কোন এয়ারলাইন্সে যাচ্ছেন। ক্যারি-অন এই ব্যাগ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন এয়ারলাইন্সের ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালা প্রচলিত আছে। তাই আপনি যে এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করছেন সেটির নীতিমালা আগে ভাগেই জেনে রাখুন যাতে বিমানবন্দর গিয়ে বিব্রত না হতে হয়।

৭. তরল জিনিস সংক্রান্ত নীতিমালা
এরোসোল, জেল, ক্রিম ও পেস্ট জাতীয় জিনিসকে বিমানে তরল জিনিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আপনার ক্যারি-অন ব্যাগে এই জাতীয় জিনিস থাকলে তা সিকিউরিটি চেকে আটকে দিতে পারে। তাই যে বিমানে ভ্রমণ করছেন তার তরল জিনিস সংক্রান্ত নীতিমালা আগেই জেনে রাখুন। আর তরল জিনিস ব্যাগের উপরের দিকেই রাখুন যাতে ফেলে দেয়ার দরকার হলে ব্যাগ ঘাটার দরকার না হয়। সাথে পানির বোতল থাকলে সেটি আগেই খালি করে রাখুন।

৮. নিষিদ্ধ জিনিস সম্পর্কে জানুন
বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু নিষিদ্ধ জিনিস রয়েছে যা আপনি সাথে রাখলে নিজেও যেমন বিব্রত হবেন তেমনি অন্যদেরও সময় নষ্ট করবেন। পাশাপাশি বিমান কর্তৃপক্ষও বিপদে পড়বে। নিষিদ্ধ জিনিসের তালিকায় চোখ বুলিয়ে নিন। ভ্রমণের সময় নিজের ব্যাগ নিজে প্যাক করুন। যাতে নিজের অজান্তে কোন নিষিদ্ধ জিনিস ঢুকে না যায়।

৯. পোষা প্রাণী সাথে রাখার জটিলতা
ঘুরতে যাওয়ার সময় পোষা প্রাণী সাথে নিতে চাইলে আপনাকে অগ্রিম পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রেও একেক এয়ারলাইন্সের একেক নীতিমালা রয়েছে। কোন কোন এয়ারলাইন্সে পোষা প্রাণী একেবারেই বহন করতে দেয়া হয় না। অনেক এয়ারলাইন্স বহন করতে দেয় তবে বিভিন্ন সর্ত আরোপ করে দেয়। যেমন প্রথম শ্রেণীতে পোষা প্রাণী নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না, মালবাহী কমপার্টমেন্টে পোষা প্রাণী রাখা যাবে না ইত্যাদি। তাই পোষা প্রাণী নিয়ে ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলে এসব শর্ত সম্পর্কে অবগত হয়ে নিন।

Airport-Security

১০. সিকিউরিটি লাইনের প্রস্তুতি
সিকিউরিটি চেকপয়েন্ট লাইন অনেক সময় বিরক্তিকর রকমের দীর্ঘ হতে পারে। এই বিরক্তিকর দীর্ঘ লাইন থেকে দ্রুত মুক্তি পেতেও কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।

সিকিউরিটি চেকপয়েন্টে ঢোকার আগে আপনার জ্যাকেট, বেল্ট, বড় ধাতব অলঙ্কার খুলে ফেলুন। পকেটে থাকা সব কিছু বের করে ফেলুন এবং যে ব্যাগটি স্ক্যানারে চেক করা হবে সেটাতে এসব ঢুকিয়ে ফেলুন। খুব সহজেই খোলা যায় এমন জুতা পরে গেলে ভাল হয়। জুতার ফিতা থাকলে আগে থেকেই খুলে রাখুন। বোর্ডিং পাশ ও দরকারি আইডি হাতেই রাখুন। যাতে স্ক্রিনিং এজেন্ট চাইলেই তার হাতে দিতে পারেন।

আপনি স্ক্যানারের জন্য যখন প্রস্তুত হচ্ছেন মোবাইল ফোন ছাড়া বাকি সব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমন ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ই-রিডার এবং গেম কনসোল আলাদা রাখুন। স্ক্রিনিং এজেন্ট এগুলা রাখার জন্য আপনাকে বাস্কেট দিবে। স্ক্যান হয়ে যাওয়া জিনিস পত্র স্ক্যানার বেল্ট থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও রাখুন। নিজের জামা কাপড় ও জুতা ঠিক করার পরে সেগুলো তুলে নিন ও প্লেনে ঢুকে যান।