বিমান ভ্রমণে যে বিষয়ে সতর্ক থাকবেন

business class পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টে আপনার যে নাম রয়েছে তার সঙ্গে বিমানের টিকিটের নামের মিল আছে তো? কিংবা বিমানে পছন্দের সিট পাবেন কিভাবে? এমন সব বিষয় নিয়েই আজকেই এই পোস্ট –

ভ্রমণ পরিকল্পনা
১. অনেকেই ডিরেক্ট ও ননস্টপ ফ্লাইটের মধ্যে পার্থক্য জানি না। আমরা চিন্তা করি ডিরেক্ট ফ্লাইট হয়তো গন্তব্য ছাড়া অন্য কোথাও থামবে না। এটা আসলে ভুল। ডিরেক্ট ফ্লাইটও অনেক সময় বিরতি নেয়। তবে সেই বিরতির সময় ফ্লাইটের মোট সময়ের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত থাকে। অন্যদিকে যে ফ্লাইটটি কোথাও না থেমে সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছায় তাকে বলে ননস্টপ ফ্লাইট ।

২. পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টে আপনার নাম যেভাবে লিখা আছে বিমানের টিকিট করার সময় ঠিক সেই নাম ব্যবহার করুন। ডেস্ক এজেন্ট অথবা নিরাপত্তা অফিসার যখন আপনার টিকিট ও অন্যান্য কাগজপত্র চেক করবেন তখন নামের সাথে মিল না পেলে ঝামেলায় পড়তে পারেন।

Haltrip Post

৩. বিমানে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা বিশেষ সিটের ব্যবস্থা থাকে। ফ্লাইটের ২৪ ঘণ্টা আগে প্রতিবন্ধীদের সিট গুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আপনার যদি কোন প্রকার শারীরিক সমস্যা থেকে থাকে তবে টিকিট কাটার সময় তা উল্লেখ করুন। বিমানে উঠার সময় বললে হয়তো এই বিশেষ সুবিধা আপনি নাও পেতে পারেন।

৪. চিলি, কেনিয়া ও ভারতের মত দেশে ঢুকতে হলে শুধু ভিসা হলেই যথেষ্ট। আবার দক্ষিণ আফ্রিকাতে ঢুকতে হলে আপনার পাসপোর্টে অন্তত ২ পৃষ্ঠা খালি পাতা থাকতে হবে। এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে ঢুকতে আগে থেকেই হোটেল বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। তাই বিমানের টিকিট কেনার আগে আপনার সঠিক কাগজপত্র আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।

প্যাকিং
১. ভ্রমণে শুধু লাগেজই নয়, সঙ্গে কাগজপত্র, ওষুধ ও সার্বক্ষণিক প্রয়োজনের জিনিস বহনের জন্য হাতব্যাগ রাখুন। ফিতাওয়ালা কাপড়ের ব্যাগ দিয়ে লাগেজের কাজ হয় না। এই ধরনের ব্যাগ চেক-ইন/চেক-আউট প্রক্রিয়ায় ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শক্ত লাগেজ ব্যবহার করুন। বহুল প্রচলিত লাগেজ না নিয়ে অস্বাভাবিক রঙের ব্যাগ নিতে পারেন। এতে আপনি সহজেই আপনার ব্যাগ সনাক্ত করতে পারবেন।

২. ছোট কম্বল ও ভেজা টিস্যু সাথে রাখুন। বিমানে হালকা শীতে কাজে আসবে। বিমান থেকে দেয়া কম্বলের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন। বিমানে খাবার পরিবেশনে যেসব পাত্র বা ট্রে ব্যবহার হয় সেগুলো পরিষ্কার করতে ভেজা টিস্যু ব্যবহার করবেন। শুনতে খারাপ শোনালেও সব এয়ারলাইন্স তাদের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক না।

৩. ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্র এমন ভাবে প্যাক করুন যাতে বাইরে থেকে বোঝা যায় এটার ভেতর ভঙ্গুর জিনিসপত্র রয়েছে। ট্রান্সপোর্টেশনে যখন মালামালের ভিড় লেগে যায় তখন অফিসাররা এলোপাথাড়ি ভাবে কাজ করতে শুরু করে। তাই ব্যাগ দেখে যদি বোঝা যায় যে, এটা ছুড়ে মারলে ভেঙ্গে যেতে পারে তাহলে হয়তো অফিসার সদয় হয়ে আপনার শখের জিনিসটি ছুড়ে নাও মারতে পারে।

৪. বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে নিজের ব্যাগ নিজেই চেক করুন। পছন্দের নেইল কাটার মেশিনটা যদি ভুলে ব্যাগে ঢুকে গিয়ে থাকে, সিকিউরিটি অফিসার হয়তো সেটা ব্যাগ থেকে বের করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। যা নিয়ে বিমানে উঠা যায় না, এমন কিছু থাকলে বাড়িতে রেখে যান।

বিমানবন্দর
১. চেক ইন থেকে আপনার লাগেজ অন্য কারো লাগেজের সাথে বদলে যেতেই পারে। যে বিমানবন্দরে আপনার বিমান অবতরণ করবে সে বিমানবন্দরের কোড জেনে রাখুন। সাধারণত বিমানবন্দরের কোড তিন অক্ষরের হয় যেমন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কোড হল – DAC। বুকিং অফিসার আপনার ব্যাগের লেবেল ঠিকমত লাগিয়েছেন কিনা নিশ্চিত করুন।

২. যে কোন ব্যাপারে বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করুন। বিমানবন্দরের অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকে। সব হয়তো আপনার চোখে নাও পড়তে পারে। যেমন ধরুন- একটি বিমানবন্দরে একাধিক রেস্তোরাঁ থাকতে পারে। আপনার বাচ্চার জন্য খেলার জায়গাও থাকতে পারে। ফ্লাইট বিলম্ব হলে যা আপনার অনেক কাজে আসবে। সিকিউরিটি চেকের জন্য একাধিক লাইনও থাকতে পারে।

৩. ডিউটি-ফ্রি দোকান থেকে কেনাকাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। এসব দোকানে সবসময় সস্তায় জিনিসপত্র পাওয়া যায় না। অনেক সময় ডিউটি-ফ্রি দোকানগুলো দরকষাকষির সুযোগ রেখে বেশি দাম লিখে রাখে। যে জিনিসটি কিনতে চাচ্ছেন সেটির স্থানীয় বিক্রয়মূল্য অনলাইনে দেখে নিন। সস্তা পেয়েই লাগেজ ভরে কিনে ফেলবেন না। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ আপনাকে ওই জিনিস কি পরিমাণ বহন করার অনুমতি দেবে সেটাও মাথায় রাখুন।

৪. ফ্লাইট বিলম্ব হলে আপনার এয়ারলাইন্সের লাউঞ্জে ঢুঁ মারতে পারেন। মেম্বারশিপ না থাকলে একদিনের টিকিট কিনে ফেলতে পারেন। খুব ব্যায়বহুল হওয়ার কথা না। ভেতরে আপনি পাবেন নাস্তা করে নেয়ার সুযোগ, গলা ভেজানোর সুযোগ, ওয়াইফাই, ভিড় ঝঞ্ঝাটহীন বাথরুম ইত্যাদি।

Air-Travel

ফ্লাইট
১. ফ্লাইটে বসে থাকা অবস্থায় আপনার যেসব জিনিসের দরকার হতে পারে সেসব জিনিস রাখতে আলাদা ছোট একটা ব্যাগ কিনুন। যেটি আপনি বিমানের সিটে বসে থাকা অবস্থায় কোলেই রাখতে পারবেন। নয়তো করিডোরে দাঁড়িয়ে উপরের তাকে রাখা ব্যাগ থেকে হেডফোন খুঁজতে গিয়ে পুরো বিমানের যাত্রীদের অসুবিধায় ফেলতে পারেন।

২. ব্যাগ ছোট হলে হাতের কাছেই কোথাও রেখে দিন। নয়তো নামার সময় এই ছোট্ট ব্যাগ তাক থেকে খুঁজে পেতে আপনার বেশ অসুবিধা হতে পারে। তাছাড়া নামার সময় তাক থেকে মালামাল নেয়ার জন্য একটা জটলার তৈরি হয়। এই বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে ব্যাগ নিজের কাছেই রাখতে পারেন।

৩. বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাওয়ার পথেই ফোন করে আপনার ডিনার রেডি করে ফেলতে বলুন। এতে করে হোটেলে পৌঁছে আপনাকে পেট শুকিয়ে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। কারণ দীর্ঘ সময় বিমান ভ্রমণের পরে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে কারোরই ভাল লাগার কথা না।